• স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তান নেওয়ার আগে যা জানা দরকার

    স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তান নেওয়ার আগে যা জানা দরকার

    দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা খুবই জরুরি। কারণ, কখন কোন প্রয়োজনে কার কাছ থেকে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয় বা কাকে রক্ত দিতে হয়, তা আগে থেকে অনুমান করা থাকে না। বিভিন্ন অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে মানুষের রক্তের গ্রুপ আলাদা হয়ে থাকে।

    গ্রুপিং পদ্ধতিতে রক্তের গ্রুপকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন এ, বি, এবি এবং ও। তবে সম্প্রতি অনেক অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে, স্বামী ও স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কোনো সমস্যা হবে কিনা। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তর যুক্তিতর্ক দেখা যায় সাধারণ মানুষের।

    স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তানের কোনো সমস্যা হয় কিনা, এ ব্যাপারে দেশের বেসরকারি একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফা খাতুন।

    তিনি বলেন, আরএইচ অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে রক্তের গ্রুপ হতে পারে পজিটিভ অথবা নেগেটিভ। এ ক্ষেত্রে যা ঘটতে পারে—

    স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে কী হয়: এ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের রক্তের গ্রুপও নেগেটিভ হয়ে থাকে। তবে এতে কোনো ধরনের সমস্যা হয় না।

    স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে কী হয়: গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপও তখন পজিটিভ হয়ে থাকে। এতে মায়ের সঙ্গে ভূমিষ্ঠ সন্তানের রক্তের গ্রুপে সামঞ্জস্য থাকে এবং তারা নিরাপদ থাকে।

    স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ ও স্ত্রীর পজিটিভ হলে কী হয়: গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ বা নেগেটিভ বা যেকোনোটাই হতে পারে। তবে মায়ের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হওয়ায় মা বা সন্তান, কারোরই ক্ষতির কোনো শঙ্কা নেই।

    স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ ও স্ত্রীর নেগেটিভ হলে কী হয়: এমনটা হলে গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভও হতে পারে অথবা নেগেটিভও হতে পারে। যদি পজিটিভ হয়, সে ক্ষেত্রে সন্তানের শরীর থেকে কিছু পজিটিভ লোহিত রক্তকণিকা মায়ের শরীরে চলে আসে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সাধারণত প্রথম বাচ্চার কোনো সমস্যা হয় না। তবে পরবর্তী সময়ে মা যদি অন্তঃসত্ত্বা হন এবং গর্ভস্থ সন্তান পজিটিভ রক্তের হয়, তাহলে এই অ্যান্টিবডি সন্তানের লোহিত রক্তকণিকাগুলোকে ধ্বংস করে।

    ‘ফলে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে রক্তশূন্যতা ও জন্ডিস দেখা দেয়। রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্রতর হলে লিভার ও হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং শিশুর শরীরে পানি জমতে থাকে। তখন গর্ভস্থ শিশুর শরীর ফুলে যায়, যাকে বলে হাইড্রপস ফেটালিস। এ অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা না হলে শিশু পেটের মধ্যে মারা যেতে পারে। এ ঘটনা পরবর্তী সব পজিটিভ রক্তধারী শিশুর ক্ষেত্রেই ঘটতে থাকে। তবে সন্তান যদি নেগেটিভ গ্রুপের হয়, তাহলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।’

    রক্তের গ্রুপ এক হলে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কী

    ১. অন্তঃসত্ত্বা প্রত্যেক মায়ের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সম্ভব হলে সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করার সময়ই করে নিন।

    ২. অন্তঃসত্ত্বা মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে অবশ্যই স্বামীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে।

    ৩. স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে মায়ের রক্তে আগেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, দেখার জন্য আরএইচ অ্যান্টিবডি নির্ণয় করতে হবে।

    ৪. মায়ের শরীরে আরএইচ অ্যান্টিবডি অনুপস্থিত থাকলে ২৮ সপ্তাহে মাকে অ্যান্টিবডি টিকা দিতে হবে এবং সন্তানের জন্মের পর তার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় মাকে টিকা দিতে হবে।

    ৫. যদি মায়ের শরীরে আগে থেকেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আর টিকার কোনো ভূমিকা নেই। ওই মাকে অবশ্যই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অন্তঃসত্ত্বা হিসেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।

     

  • যেসব খাবার খেলে বৃদ্ধি পায় পুরুষের হরমোন

    যেসব খাবার খেলে বৃদ্ধি পায় পুরুষের হরমোন

    পুরুষত্বের জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রধানত দায়ী। হরমোনের ঘাটতি হলে পুরুষের শরীরের নানান রকম সমস্যা হতে পারে। বয়স ত্রিশ পেরোনোর পর পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি কা’মবাসনা কমে যাওয়া, লি’ঙ্গোত্থানে সমস্যা, খারাপ মেজাজসহ মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।

    এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত কিছু খাবার খাওয়ার অভ্যাস করলেই উপকৃত পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাহায্য করে এমনই কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করা হলো।

    মধু
    মধুতে আছে প্রাকৃতিক নিরাময়কারী উপাদান বোরোন। এই খনিজ উপাদান টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে এবং নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা ঠিক রাখে। যা ধমনী সম্প্রসারণ করে লি’ঙ্গোত্থানে শক্তি সঞ্চার করে।

     

    ফ্যাটি ফিশ
    টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে চাইলে আপনাকে ডায়েটে ফ্যাটি ফিশ রাখতেই হবে। আর এই বিষয়টি ইতোমধ্যেই একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই স্যালমন, সার্ডিনের মতো মাছ খাওয়া শুরু করুন। তবে এসব মাছ না পাওয়া গেলে রুই, কাতলা বা বিভিন্ন ছোট মাছ খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।

    বাঁধাকপি
    এই সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। আরও আছে ইনডোল থ্রি-কার্বিনল। এই উপাদান স্ত্রী হরমোন ওয়েস্ট্রজেনের পরিমাণ কমিয়ে টেস্টোস্টেরন বেশি কার্যকর করে তোলে।

    সবুজ শাকপাতা
    শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে চাইলে নিয়মিত সবুজ শাক খেতে হবে। একই পরামর্শ দিচ্ছে হেলথলাইনও। শাকে ম্যাগনেশিয়ামসহ এমন কিছু মাইক্রোনিয়েট্রিয়েন্ট রয়েছে যা কিনা টেস্টোস্টেরন লেভেল অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়েটে শাকপাতা থাকাটা খুবই জরুরি।​

    রসুন
    রসুনের আলিসিন যৌগ মানসিক চাপের হরমোন করটিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে টেস্টোস্টেরন ভালোমতো কাজ করে। ভালো ফল পেতে রসুন কাঁচা খাওয়ার অভ্যেস করুন।

    ডার্ক চকলেট
    ডার্ক চকলেটে থাকে কোকাও নামক একটি উপাদান। আর এই উপাদানটি কিন্তু অত্যন্ত উপকারী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ ছাড়াও ডার্ক চকোলেটে অন্যান্য একাধিক উপকারী ফ্ল্যাভানয়েডসও রয়েছে। এইসব উপাদানও টেস্টোস্টেরন বাড়াতে সক্ষম।

     

    ডিম
    ডিমে আছে স্যাচারেইটেড ফ্যাট, ওমেগা থ্রিএস, ভিটামিন ডি, কলেস্টেরল এবং প্রোটিন। টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরির জন্য এই উপাদানগুলো জরুরি।

    কলা
    এই ফলের ব্রোমেলেইন এনজাইম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আর দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সরবরাহের উৎস হিসেবে কাজ করে।

    ঝিনুক
    টেস্টোস্টেরন তৈরিতে জিংক গুরুত্বপূর্ণ। ঝিনুকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান। যা টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।ঝিনুক পছন্দ না, তাহলে বিকল্প হতে পারে চিজ বা পনির। বিশেষ করে সুইস এবং রিকোত্তা চিজ।

    টক ফল
    ‘স্ট্রেস হরমোন’ কমানোর পাশাপাশি টকজাতীয় ফলে রয়েছে ভিটামির এ। যা টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন করতে প্রয়োজন হয়। এছাড়া ওয়েস্ট্রজেনের মাত্রা কমায় অর্থাৎ পুরুষ হরমন ভালোমতো কাজ করতে পারে।

    পালংশাক
    এটা প্রমাণিত যে, ওয়েস্ট্রজেনের মাত্রা কমাতে পারে এই শাক। তাছাড়া আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ই। আর এসবই টেস্টোস্টেরন তৈরির উপাদান।

    আঙুর
    হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একথোক লাল আঙুর খাওয়া গেলে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, শুক্রাণুর তৎপতরতা উন্নত করে আর শক্তিশালী করে।

    ডালিম
    ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইম্পোটেন্স রিসার্চ থেকে জানা যায় যৌন কর্মে অক্ষম পুরুষদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ যারা প্রতিদিন ডালিমের রস খেয়ে থাকেন তাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

    বেরি জাতীয় ফল
    ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, বেরি জাতীয় ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। আর এই সমস্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিন্তু টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নেয়। এমনকি একাধিক ছোট-বড় রোগ দূরে রাখার কাজেও এর জুড়ি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাবা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করার ইচ্ছা থাকলে নিয়মিত এই ফল খেতে ভুলবেন না।

     

    মাংস
    বিশ্বাস করা হয় যারা একেবারেই মাংস খান না তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম থাকে। তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার আগে সাবধান। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান গরু ও ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি খাবারে প্রচুর স্যাচারেইটেড ফ্যাট থাকে।

    চাইলেই আপনি সহজেই বাড়াতে পারবেন টেস্টোস্টেরন। ডায়েটে কয়েকটি খাবারকে জায়গা করে দিতে হবে। তাহলেই আপনার টেস্টোস্টেরন বাড়তে থাকবে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো।

     

  • বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের যেসব টেস্ট জরুরি

    বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের যেসব টেস্ট জরুরি

    বিয়ে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। দুজন মানুষ শুধু সামাজিকভাবে নয়, শারীরিকভাবেও কাছাকাছি আসেন। তাই বিয়ের আগে হবু জীবনসঙ্গীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বের অনেক দেশে এ নিয়ে সচেতনতা থাকলেও আমাদের দেশে এখনও তা তেমন গড়ে ওঠেনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিয়ের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা দু’জনেরই করানো উচিত। আসুন জেনে নিই সেই পরীক্ষাগুলো কী কী।

    ১. রক্তের গ্রুপ ও আরএইচ ফ্যাক্টর পরীক্ষা
    বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্তের গ্রুপ জানা খুবই জরুরি। বিশেষ করে আরএইচ পজেটিভ বা নেগেটিভ বিষয়টি না জানলে ভবিষ্যতে সন্তানের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে স্ত্রী নেগেটিভ এবং স্বামী যদি পজেটিভ গ্রুপের হলে সন্তান হতে পারে নেগেটিভ বা পজেটিভ রক্তের গ্রুপের। সন্তান নেগেটিভ গ্রুপের হলে সমস্যা নেই, তবে পজেটিভ হলেই বিপদ। যদিও এক্ষেত্রে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা কম। সন্তান প্রসবের সময় সন্তানের রক্ত মায়ের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে। ফলে মায়ের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। এ এন্টিবডি মায়ের শরীরে বাসা বাঁধে। পরবর্তীতে আরেকটি সন্তান যদি পজেটিভ গ্রুপের হয় তবে সেই এন্টিবডিপ্লাসেন্টার মাধ্যমে ভ্রুণে প্রবেশ করে তার রক্তকণিকাগুলো ধ্বংস করে ফেলে। তখন গর্ভস্থ শিশু গর্ভেই মারা যেতে পারে। কিংবা জন্মের পর মারাত্মক জন্ডিস, মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন। স্ত্রীর নেগেটিভ ও স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ হলেও ভয়ের কিছু নেই। এমনটি হলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর তার রক্ত পরীক্ষা করান। সন্তান পজেটিভ হলে মায়ের শরীরে এন্টি-ডি ইনজেকশন দিয়ে নিতে হবে, অবশ্যই তা চিকিৎসকের পরামর্শে।

    ২. মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা
    মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে দাম্পত্য জীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই হবু বর বা কনের কোনো মানসিক রোগ আছে কি না তা জেনে নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কেউ আগে মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকলেও তা জানিয়ে দেওয়া উচিত।

    ৩. এইডস ও যৌনবাহিত রোগ পরীক্ষা
    এইডস ছাড়াও সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি ও সি, গনোরিয়ার মতো যৌনবাহিত রোগ একে অপরের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। তাই বিয়ের আগে দুজনেরই এসব রোগের পরীক্ষা করানো নিরাপদ।

    ৪. বন্ধ্যাত্ব সংক্রান্ত পরীক্ষা
    নারী বা পুরুষ যে কারও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা থাকতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে সিমেন বিশ্লেষণ, আর নারীর ক্ষেত্রে হরমোন পরীক্ষা (এফএসএইচ, এলএইচ, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, প্রোল্যাকটিন) এবং পেলভিক আলট্রাসনোগ্রাম করানো ভালো।

    ৫. ওভারি পরীক্ষা (নারীর ক্ষেত্রে)
    বর্তমানে অনেক নারী উচ্চ বয়সে বিয়ে করেন। জীবনযাত্রার প্রভাবে ওভারিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা সন্তান ধারণে জটিলতা তৈরি করে। তাই বিয়ের আগে ওভারি পরীক্ষা করানো উচিত।

    ৬. জেনেটিক বা বংশগত রোগ পরীক্ষা
    হবু বর-কনের বংশগত বা জেনেটিক রোগ আছে কি না তা জানা গেলে ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়ানো যায়। তাই জেনেটিক পরীক্ষা করানো জরুরি।

    ৭. থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা
    থ্যালাসেমিয়া একটি গুরুতর বংশগত রোগ। বর-কনে দুজনই থ্যালাসেমিয়া বাহক হলে সন্তান গুরুতর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বিয়ের আগে এ পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।

    ৮. রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) পরীক্ষা
    বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা থাকলে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মের সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই রক্তস্বল্পতা আছে কি না তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

    সুস্থ দাম্পত্য জীবনের জন্য আগে থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি। বিয়ের আগে এসব পরীক্ষা দুজনেরই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

     

  • দেড় মাস হলো বিয়ে হয়েছে আর সেদিন থেকেই ঘুমাতে পারিনা

    দেড় মাস হলো বিয়ে হয়েছে আর সেদিন থেকেই ঘুমাতে পারিনা

    দেড় মাস হলো বিয়ে হয়েছে আর সেদিন থেকেই ঘুমাতে পারিনা
    সারারাত ঘুম হয়নি।নতুন বিয়ে হয়েছে। বিয়েটা পরিবার থেকেই হয়েছে।দেড় মাস হলো বিয়ে হয়েছে আর সেদিন থেকেই ঘুমাতে পারিনা। অথচ এই বিয়ে নিয়ে কত্ত স্বপ্ন দেখতাম!! ছিমছাম, সুঠাম দেহের হ্যান্ডসাম রাজপুত্রের মতো দেখতে একটা ছেলের সাথে আমার বিয়ে হবে। কত রোমান্টিক কথা বলবে, একসাথে কত্ত মধুর স্মৃতি, কত্ত জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবে!! তার সাথে রাত জাগারও প্ল্যান ছিল। কিন্তু সেই রাত জাগা আর এখনকার রাত জাগার মধ্যে অনেক তফাৎ।

    ইচ্ছে ছিল আমরা একসাথে রাতের বেলা বেলকনিতে বসে কফি খাবো আর জোৎস্না দেখবো, কোন কোন দিন রাতে ছাদে শুয়ে শুয়ে চাঁদের আলো গায়ে মাখবো, হয়তোবা কখনো কখনো তারা গুনবো। একটা সিনেমা সিনেমা ফিলিংস থাকবে।। কিন্তু কি পেলাম আমি?? পেলাম তো এক ভুড়িওয়ালা কালো চামড়ার বিরক্তিকর লোককে, যে সারারাত নাক ডেকে ডেকে ঘুমোয়।

    ঘুমের ঘোরে সে অনবরত হাত পা ছুঁড়তে থাকে। আমাকে সে মাঝে মাঝে এমন ভাবে কোলবালিস বানিয়ে ঘুমোয় যে আমার নিঃশ্বাস আটকে যেতে চায়।।।আর আমাকে জেগে থাকতে হয়। প্রথম প্রথম খুব মেজাজ খারাপ হতো, রাগ লাগতো নিজের ভাগ্যের উপর। কিন্তু এখন আর একটুও খারাপ লাগেনা। দিন যাচ্ছে আর মনে হচ্ছে এই বিষয়টা আমি ইনজয় করছি। দিনকে দিন আমার ধারণা, ভালো লাগা- খারাপ লাগার ধরণ চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।

    আমার বরের নাম সোহানুর রহমান। আমি এখনও সামনাসামনি নাম ধরে ডেকে উঠতে পারিনি। ২০-২১ বছরের একটা মেয়ের পক্ষে ৩২-৩৩ বছরের একটা ভুড়িওয়ালা লোকের নাম ধরে ডাকা কি সম্ভব?? আমি সোহানকে এখনো আপনি করেই ডাকি।। তুমি বলতে অস্বস্তি লাগে।। সোহান একটা প্রাইভেট জব করে। সোহানকে স্পেশালি আমার বাবার খুব পছন্দ। বাবার পছন্দের কারণেই আমার বিয়েটা করা। বয়সের এত্ত গ্যাপ থাকার কারণে এবং

    প্রথম অবস্থায় সোহানকে পছন্দ না হওয়াতে আমি অনেক আপত্তি করেছিলাম বিয়েতে। কিন্তু ওই যে কপালের লিখন না যায় খন্ডন। বিয়েটা হয়েই গেলো। সোহান অফিস যাওয়ার পর শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। এমন সময়ে দরজায় কলিং বেল বাজলো ২ বার। চোখ খুলে দেখলাম ১১.২৫ বাজে।এই সময় আবার কে আসবে ভাবতে ভাবতে গেট খুলে দেখি সোহান। একি আপনি?? এই সময়? কিছু হয়েছে কি?? আপনি তো এই সময় আসেননা।

    দাঁড়াও দাঁড়াও এত প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর দেবো কি করে?? এক গ্লাস পানি দাও আগে।। আর হ্যাঁ শোন পানিতে বরফ দিও একটু। আমি পানি নিতে এগুতে এগুতে বললাম দরজাটা লাগিয়ে দিন।। তারপর একগ্লাস নরমাল পানি দিলাম তাকে।একি পানিতে বরফ দাওনি? পানিটা তো গরম হয়ে আছে।। ওইটা খেয়ে তৃপ্তি হবেনা।

    না হলে না হবে। ভুলে গেলেন কয়েকদিন আগে ঠান্ডা পানি খেয়ে কি অবস্থা হয়েছিল?? আজব যেটা খেলে সমস্যা হয় সেটা খান কেন?? ওরে বাবা! ঠিকআছে ঠান্ডা পানি আর খাবোনা যাও। কিন্তু আমার বৌ-টা রাগ করলে তো আরো সুন্দর লাগে?? দেখি একটু কাছে আসো তো!আহ্ কি করছেন কি বলুন তো? ভীমরতি ধরেছে নাকি?? যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি চা বানাচ্ছি।।

    ঠিক আছে! যাচ্ছি। ইয়ে মানে বলছিলাম কি চায়ে একটু চিনি বেশী দিও কেমন??এই লোকটাকে প্রথম প্রথম খুব বেশি বিরক্ত লাগতো, যদিও মুখে প্রকাশ করিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে মনে হয় একটু একটু ভালো ও লাগছে। নাহ একটু না, অনেক বেশী ভালো লাগছে। প্রথম প্রথম যেগুলা অসহ্য লাগতো এখন সেগুলাই ভালো লাগছে। আচ্ছা আমি কি ওনার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি নাকি??এই যে নিন আপনার চা।। আদা চা করেছি আর হ্যাঁ, চিনি ছাড়া। এটাই খেয়ে নিন। আপনার এখন থেকে কিছু কিছু জিনিস কন্ট্রোল করতে হবে। এ নিয়ে আর কোন কথা বলা যাবেনা।

    ইয়ে এক চামুচ তো দিতে পারো তাইনা?এক চিমটি ও না। ওটাই খেয়ে নিন। এখন বলুন তো এত্ত আগে কেন আসলেন আজকে?? কিছু হয়েছে??আজ একটা কাহিনী ঘটেছে। আমার এক কলিগের বড় বোনের জন্য রক্তের দরকার ছিল। কোথাও পাচ্ছিলনা, আর আমার সাথে মিলে গেলো তাই আমি ডোনেট করলাম। এই জন্য আজ বস ছুটি দিয়ে দিল।মানে কি? আপনি ব্লাড ডোনেট করে এসেছেন? আর আমি কিছুই জানিনা? আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করেননি??না, তা না। আসলে ভাবলাম তুমি যদি টেনশন করো!

    বয়েই গেছে আমার টেনশন করতে। আচ্ছা স্যালাইন খেয়েছেন? আর ডাব খেয়েছেন কি? বাসায় তো কোনটাই নেই। আচ্ছা এতো অস্থির হচ্ছো কেন?? স্যালাইন খাইনি তবে জুস দিয়েছিল জুস খেয়েছি। আর আসার সময় একটা ডাব খেয়েছি।। ধুর! জুস খেয়ে কি হবে? সব কেমিক্যাল।ডাব টা কাজে লাগবে। দাড়ান এককাজ করি! পানি, চিনি আর লবণ দিয়ে স্যালাইন বানিয়ে আনি। আর একটা ডিম সেদ্ধ আনি।

    এই শোন শোন, এখন দরকার নেই। আসো, আমার পাশে একটু বসো, গল্প করি।।বসতে পারবোনা। আপনি ওয়েট করুন, আমি আসছি এখনি।ডিম সেদ্ধ, আর স্যালাইন বানিয়ে এনে দেখি “ও” ঘুমিয়ে পড়েছে। ওকে জাগাতে ইচ্ছা করছেনা। কেন জানিনা ওর ঘুমানো দেখতে ভালো লাগছে। মানুষটার উপর কেন জানিনা মায়া পড়ে গেছে। কালো একটা মানুষ যে এত্ত সুন্দর হতে পারে আগে বুঝিনি। কালো অনেক মানুষ আছে যারা অনেক সুন্দর হয়। কিন্তু তারা কেউ আমার বরের মতো

    সুন্দর না। কি আজব যেই মানুষটাকেই কয়েকদিন আগে কুৎসিত মনে হতো তাকেই আজ সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ মনে হয়। তাকে কেউ খারাপ বললে সহ্য করতে পারিনা। আচ্ছা এটাই কি প্রেম?প্রেমে পড়েছি আমি?? কেন জানিনা ইচ্ছা করছে ওর কোলবালিশ হয়ে যাই। ও ঘুমোবে আর আমি দেখবো।।কখন যেন ঘুমিয়ে গেছিলাম নিজেও জানিনা। উঠে দেখি ২.৩৮ বাজে। কয়েক সেকেন্ড মনে হলো সব ভূলে গেছি।

    তারপর মনে হলো সোহান তো বাড়িতে আছে। একি! দুপুরেতো রান্নাই করিনি আজকে। ও খাবে কি?? আমি কখন কি করবো? এমনিতে সকালে মানুষটাকে রাতের বাঁসি রুটি-তরকারি খেয়ে অফিসে যেতে হয়েছে। আবার দুপুরেও একটু খাবার রান্না করে দিতে পারলামনা? কিন্তু ও ই বা কোথায় গেলো? রান্না ঘরের দিকে গিয়ে দেখি মশায় রান্না করছেন।

    ওমা! একি!! আপনি? কি করছেন? আমাকে ডাকেননি কেন??তুমি ঘুমিয়ে পরেছিলে। তাই ডাকিনি। টি- টেবিলে স্যালাইন আর ডিম রাখা ছিল খেয়ে নিয়েছি। তারপর ভাবলাম আজ তোমাকে না ডাকি। একদিন না হয় আমি রান্না করে খাওয়াই নিজের বৌ- কে। ব্যাচেলর থাকতে তো মাঝে মাঝেই রান্না করে বন্ধুরা মিলে খেতাম।মনে মনে যে খুশি হয়েছি সেটা কিছুতেই প্রকাশ করা যাবেনা। আমি একটু চেঁচিয়ে বললাম, আপনি তো সব কিছু অগোছালো করে দিলেন। আমার সব কাজ বাড়িয়ে দিয়েছেন। কে করতে বলেছে আপনাকে এসব? আমাকে ডাকলেই তো হতো।।

    সবসময় আমি- তুমি, আমি- তুমি ভাবো কেন বলতো? আমরা ভাবতে পারোনা? আমি তুমি আলাদা না ভেবে দুইটা যোগ করে আমরাভাববে কেমন? শোন দুইজন মিলেগুছিয়ে রাখবো।। আর তোমার থেকে আমি অনেক বড়। আমি তোমার স্বামী। মনে মনে যে খুশি হয়েছো এইটা প্রকাশ করতে দোষের কিছু নেই।

    ছোট মেয়ে ছোট মেয়ের মতই থাকবা। এখন এদিকে আসো, দেখো তো রান্না কেমন হয়েছে? ভাত, মুরগীর মাংস আর ডাল। চলবেনা??রান্নাটা মজা হয়েছে। কিন্তু চলবেনা।কেন? আর কিছু লাগতো? নাহ আসলে চলবেনা কারণ দৌঁড়াবে। মজা করালাম একটু আর কি।শব্দ করে হেসে হুম মাঝে মাঝে মজা করবা। ভালো লাগে আমার। চল খেতে বসি অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে।

    ও নিজেই খাবার সার্ভ করছিল, তখন খেয়াল করলাম হাতে একটু ফোসকা উঠেছে।একি? রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেছেন? বাহ্ খুব ভালো।৷ আমাকে ডাকলে সমস্যা কোথায় ছিল? লেকচার তো ভালোই দিলেন, আমি তুমি মিলে আমরা। কিন্তু নিজের বেলায় আলাদা তাইনা?

    ও কিছু না। সামান্য একটু…চুপ। দাড়ান মলম লাগিয়ে দিচ্ছি। আর শুনুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি আপনাকে। ওই হাত দিয়ে খেতে হবেনা। কিহ্!! সত্যি? তাহলে তো আমি ১০০ বার হাত পুড়িয়ে ফেলতে রাজি আছি।অমনি না?? থামুন। আর একটা ও কথা বলবেননা । আজকের দিনটা ও শেষ হয়ে গেলো। রাতে শুয়ে ছিলাম দুইজনই। আমি ওনাকে বললাম – শুনুন, একটা কথা বলবো??হ্যাঁ বলো।না থাক না না বলনা কিছুনা।

    সে হঠাৎ আমার মাথাটা তার বুকের মধ্যে নিয়ে বলল ভালোবাসি কথাটা অতটাও কঠিন না পাগলীটা। তাছাড়া আমি তোমার স্বামী। আমাকে যখন যা খুশি তাই বলতে পারো। এত সংকোচ করোনা।।আমি আর কোন কথা বলিনি৷ চোখ টা বন্ধ করে থাকলাম। হয়তো আজো ঘুম হবেনা। এই জেগে থাকাটা ফিল্মের মতো না৷ কিন্তু এতে সত্যিকারের ভালোবাসা আছে। তাই এটা আরো বেশী সুন্দর। আগে বুঝতামনা। কিন্তু এখন ঠিকি বুঝি। ভালোবাসি “ও”কে। এরমধ্যেই

    ও” ঘুমিয়ে গেছে। নাক ডাকা শুরু হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে হাত পা ছুঁড়বে কিছুক্ষণের মধ্যেই ৷ ওর ভূড়ি আমার শরীর স্পর্শ করে আছে। কিন্তু আমার খুব ভালো লাগছে৷ ওর গায়ের গন্ধ ভালো লাগছে।৷ জেগে থেকে ওর ঘুম দেখতে ভালো লাগছে ।।
    গল্পঃ আমি, তুমি মিলে আমরা