সাধারণ পিঠের ব্যথা নাকি প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার? যেভাবে চিনবেন সতর্ক সংকেত
বর্তমান সময়ে পিঠের ব্যথা শুধুমাত্র বৃদ্ধদের সমস্যা নয়। আজকাল এটি তরুণ ও মধ্যবয়সী অনেকেরই সাধারণ অভিযোগ। অনেকে এটিকে পেশীর চাপ, খারাপ ভঙ্গি বা দীর্ঘক্ষণ বসার ফলাফল হিসেবে উপেক্ষা করেন। তবে কখনও কখনও এটি শুধু পিঠের ব্যথা নয়, বরং আরও গভীর ও গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। সেই সাধারণ ব্যথার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের মতো জীবন-ঝুঁকিপূর্ণ রোগ।
পিঠের ব্যথা ও প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের সংযোগ
সাধারণত পিঠের ব্যথা পেশীর চাপ, মেরুদণ্ডের ক্ষয় বা স্নায়ু সংকোচনের কারণে হয়। তবে বিরল ক্ষেত্রে, বিশেষত যখন অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন এটি গভীর রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ সূক্ষ্ম ও অস্পষ্ট হওয়ার কারণে অনেক সময় রোগ ধরা পড়ে না, ফলে রোগ যখন ধাপে ধাপে বাড়ে তখনই সমস্যার খবর আসে।
প্যানক্রিয়াস শরীরের গভীরে, পেটের পেছনে ও মেরুদণ্ডের সামনে অবস্থিত। এর টিউমার বড় হলে কাছের স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে বা মেরুদণ্ডের নিকটবর্তী টিস্যুতে ছড়াতে পারে। এজন্য ব্যথা সাধারণত উপরের পেট থেকে শুরু হয়ে পিঠে ছড়ায়। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ যেমন হালকা বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া, ক্লান্তি, হজমের সমস্যা ইত্যাদি সাধারণ সমস্যার সঙ্গে সহজেই মিলিয়ে নেওয়া যায়।
সাধারণ পিঠের ব্যথা বনাম প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের সতর্ক সংকেত
সাধারণ পিঠের ব্যথা প্রায়শই শারীরিক চাপ, খারাপ ভঙ্গি বা দীর্ঘক্ষণ বসার কারণে হয়। এটি বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপিতে দ্রুত ভালো হয়ে যায়। অন্যদিকে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে ব্যথা ধীরে ধীরে শুরু হয়, সপ্তাহ বা মাস ধরে বাড়তে থাকে এবং সাধারণ চিকিৎসায় তেমন উন্নতি হয় না।
ব্যথার অবস্থান ও প্রকৃতি: সাধারণ ব্যথা সাধারণত নিচের পিঠ, মেরুদণ্ড বা পাশের দিকে সীমিত থাকে। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে ব্যথা উপরের পেটে (পাঁজরের নিচে) শুরু হয়ে মধ্যপিঠ বা মেরুদণ্ডে ছড়ায়।
চলাফেরার সঙ্গে সম্পর্ক: সাধারণ ব্যথা বোঁচকা, ভারী জিনিস তোলা বা ঘুরানোর সঙ্গে বাড়ে বা কমে। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে শুয়ে থাকার সময় ব্যথা বাড়ে, বসার সময় কিছুটা কমতে পারে।
অন্য লক্ষণ: সাধারণ ব্যথার সঙ্গে সাধারণত অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ দেখা যায় না। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে ক্ষুধা কমে যাওয়া, ওজন কমা, হলদেটে চামড়া বা চোখ, গাঢ় মূত্র, ফ্যাকাশে বা তৈলাক্ত মল, নতুনভাবে ডায়াবেটিস, ক্লান্তি ইত্যাদি। যদি পিঠের ব্যথার সঙ্গে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার কী?
প্যানক্রিয়াস পেটের নীচের অংশের পেছনে অবস্থিত অঙ্গ। এটি হজমে সাহায্যকারী এঞ্জাইম ও শরীরে শর্করার মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন নিঃসরণ করে। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার প্রায়শই ধীরে ধীরে বড় হয়, দ্রুত ছড়ায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ দেখা যায় না। রোগ নির্ণয় প্রাথমিকভাবে কঠিন, তবে রোগ ধরা পড়লে সার্জারি, কেমোথেরাপি ও সহায়ক চিকিৎসা সম্ভব।
যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে একাধিক দেখা যায়, তবে স্ব-নির্ণয় করা ঠিক নয়। চিকিৎসকের সঙ্গে বিস্তারিত ইতিহাস শেয়ার করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসার সম্ভাবনা ও সাফল্যের হার অনেক ভালো থাকে।
পিঠের ব্যথা সাধারণত স্বাভাবিক হলেও, এর সঙ্গে সতর্ক সংকেত দেখা দিলে তা অবহেলা করা যাবে না। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের মতো গুরুতর অবস্থার প্রাথমিক চিহ্ন শনাক্ত করলে সময়মতো চিকিৎসা অনেক জীবন রক্ষা করতে পারে।